মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার নিয়ম ২০২৩। গর্ভবতী ভাতা আবেদন।
মাতৃকালীন ভাতা আবেদন করার নিয়ম বা গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে যদি আপনি জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আশাকরি আপনি জানতে পারবেন কিভাবে মাতৃকালীন ভাতা অথবা গর্ভবতী আবেদন করলে সঠিকভাবে গ্রহণযোগ্য করা হবে।
এবং এর কি কি নিয়ম রয়েছে সেই নিয়ম আপনার অজানা থাকলে জেনে নিতে পারেন। এবং ঘরে বসেই মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করা যাবে। অনলাইনে সব কাজ করতে পারবেন। এছাড়াও মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা ও কিভাবে নিবেন বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা ২০২৩
গরীব ও দুঃস্থ অসহায় মহিলাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতার ব্যাবস্থা করেছেন। একজন মা এই ভাতা আওতাধীন হতে পারবে তবে এর জন্য বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। যদি আপনি সব শর্ত ও নীতিমালা এর ভিতরে থাকেন তাহলে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে।
প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশনে মাতৃকালীন ভাতা আবেদন গ্রহণ করা হয়। আপনি মোট কয়েকটি ধাপে মাতৃকালীন ভাতা না গর্ভবতী ভাতা আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে। এটি খুবই সহজ এবং ঘরে বসে আপনি মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আরোও পড়ুন: বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে।
মাতৃকালীন ভাতা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি পাবেন। অর্থাৎ গরিব অসহায় বসতবাড়ি রয়েছে বা ভাড়া থাকে, চাষ করার কোনো জমি নেই বা পুকুর নেই এই সমস্ত নিয়মের মধ্যে যারা রয়েছে তারা এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার শর্ত ২০২৩
- প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল (একবার)
- বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে
- মোট মাসিক আয় ১৫০০/- টাকার নিম্নে
- দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পাবেন
- কেবল বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বাস করে
- নিজের বা পরিবারের কোনো কৃষি জমি, মৎস্য চাষের জন্য পুকুর নেই
- উপকারভোগীকে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে
এই সমস্ত শর্ত বা কর্মসূচির মধ্যে যদি আপনি থাকেন তাহলে মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেখানে আপনার নামটি মাতৃকালীন ভাতার জন্য লিপিবদ্ধ করে নিতে হবে। কেননা এটি কিন্তু যাচাই-বাছাই করা হবে। কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত বিবেচনায় সঠিক ভাতা ভোগকারীকে নির্বাচন করবেন।
প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান অর্থাৎ যেকোন একবার আপনি এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে কোনো কারণে যদি দুই বছর পর শিশু মারা যায় তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য আবেদন করা যাবে। এবং সে ৩৬ মাস পর্যন্ত এই ভাতা ও ভোগ করতে পারবে প্রতি মাসে ৮শত টাকা করে।
এই ভাতা আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ২০ হতে হবে। এবং ৩৫ পর্যন্ত এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের যেকোনো একবার। তৃতীয় সন্তানের জন্য আবেদন করা যাবে তবে শর্তসাক্ষেপ।
মোট মাসিক আয় ১৫০০/- টাকার নিচে থাকতে হবে। যদি আপনার মাসিক আয় এর ঊর্ধ্বে থাকে তাহলে কিন্তু চূড়ান্ত নির্বাচনে আপনাকে বাতিল করা হতে পারে। কেননা এখানে বলা হয়েছে দরিদ্র এবং অসহায় মানুষের জন্য এই ভাতা।
যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমান সম্পদ থাকে অর্থাৎ বসত বাড়িসহ কৃষি জমি বাম মৎস্য চাষ করার জন্য পুকুর। এই সমস্ত থাকলে আপনি গর্ভবতী ভাতা বা মাতৃকালীন ভাতা আবেদন করতে পারবেন না।
এবং আবেদন করার সময় অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে। চূড়ান্ত বিবেচনা এখান থেকে ভাতা ভোগকারীদের কে নির্বাচন করা হবে। এবং যারা এখানে গ্রহণযোগ্য হবে পরবর্তী সময় হতে তাদেরকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে মাসিক ৮০০ টাকা করে টাকা প্রদান করা হবে।
গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম।
মাতৃকালীন ভাতা এবং গর্ভবতী ভাতা একই। যদি আপনি পরিপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে পারেন তাহলে এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য আপনার বিশেষ কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে যেমন: ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, গর্ভকালীন সনদ সহ টিকা কার্ড , সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগবে:
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তৃক গর্ভকালীন সনদ।
- নাগরিক সনদ, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন।
- টিকা কার্ড (প্রত্রয়ন)
- টাকা গ্রহণের জন্য ১১ ডিজিটের (বিকাশ/নগদ) মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বার।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন।
গর্ভবতী বা মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনের জন্য http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration সাইটে ব্যক্তিগত তথ্য, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, আর্থ-সামাজিক তথ্য ও পেমেন্টের তথ্য দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করতে হবে। চূড়ান্ত নির্বাচিত ব্যক্তি ভাতা পাবে।
উপরোক্ত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আমাদেরকে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এখানে যে সকল তথ্য দিতে হবে তা অবশ্যই অরিজিনাল এবং সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। চূড়ান্ত যাচাইয়ের সময় যদি তারা মনে করে আপনি কোন ভুল তথ্য দিয়েছেন তাহলে আপনার আবেদনটি বাতিল করা হতে পারে। তাই সঠিকভাবে ফর্মটি পূরণ করতে হবে। এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
ধাপ ১: ব্যাক্তিগত তথ্য
অবশ্যই মনে রাখবেন (*) মার্ক করা চিহ্নিত ঘরগুলি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। প্রথমে আমাদেরকে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে উপরে ছবিতে দেখা যাচ্ছে। প্রথমে আপনাকে অর্থবছর নির্বাচন করতে হবে ২০২৩-২৪ এরপর আপনার NID তথ্য দিতে হবে। এরপর নাম পিতা মাতার নাম জন্মস্থান সহ যে সকল তথ্য এখানে দেওয়া হয়েছে সকল ধরনের তথ্য অবশ্যই সঠিকভাবে পূরণ করবেন।
ধাপ ২: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
এখানে আমাদের সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে যেমন: বাড়ি/গ্রাম, ব্লক/রাস্তা/সেক্টর, জেলা, উপজেলা, বিভাগ, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পোস্ট কোড, এই সমস্ত তথ্য আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ডে পেয়ে যাবেন। যদি আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হয়ে থাকে তাহলে দুটি আলাদা ভাবে পূরণ করতে হবে। যদি একই হয়ে থাকে এক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা লেখার পর দেখতে পারবেন একই নামের একটি বক্স রয়েছে সেখানে ঠিক দিবেন।
ধাপ ৩: আর্থ-সামাজিক তথ্য
এরপর আর্থসামাজিক তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার পরিবারের অর্থ উপার্জন বা ব্যক্তি তথ্য এখানে প্রয়োজন হবে। যেমন: পরিবারের প্রথম রোজগারী মহিলা, মাসিক আয়, প্রতিবন্ধী, বাসস্থান, কৃষি জমি রয়েছে কিনা, বয়স, গর্ভধারণ ক্রম। এই সকল ঘর থেকে আপনি সঠিক তথ্য প্রদান করবেন। এবং মাসিক আয় অবশ্যই ১৫০০ টাকার নিচে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা গরিব ও অসহায়দের জন্য এই ভাতা প্রযোজ্য।
ধাপ ৪: পেমেন্টের তথ্য
পেমেন্ট তথ্য অবশ্যই সঠিকভাবে দিতে হবে। কিভাবে আপনি পেমেন্ট নিতে যাচ্ছেন অর্থাৎ মাতৃকালীন ভাতা আপনি কিভাবে গ্রহণ করবেন। ব্যাংকিং/মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করা যাবে। তবে ভালো হবে যদি মোবাইল ব্যাংকিং দেন।
মাতৃকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়! আপনি মাতৃকালীন ভাতা: বিকাশ, রকেট, নগদ,উপায়, শিওর ক্যাশ, ওকে ওয়ালেট, এম ক্যাশ, যেকোনো একটি ব্যবহার করে গর্ভবতী ভাতা নেওয়া যাবে।
ধাপ ৫: প্রার্থীর ছবি/স্বাক্ষর
সর্বশেষ আপনাকে আরো দুটি তথ্য সংশোধন করতে হবে। আপনার ছবি অবশ্যই এখানে দিতে হবে অর্থাৎ পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করবেন। এবং কিছুই বা স্বাক্ষর কোন একটি কাগজে লিখে তা ছবি তুলে এখানে আপলোড করতে হবে।
সকল তথ্য পুনরায় যাচাই করবেন এবং সঠিকভাবে দেখবেন যে কোন তথ্য ভুল দেওয়া হয়েছে কিনা। সর্বশেষ সব কিছু সঠিক থাকলে সংরক্ষণ অপশনে চাপ দিয়ে আবেদন পত্রটি পিডিএফ আকারে আপনার ডিভাইসে সংগ্রহ করে রাখবেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন ফরম ২০২৩।
এছাড়াও আপনি মাতৃকালীন ভাতা আবেদন ফরম উপজেলা উপকারভোগীদের গর্ভধারণ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা/স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট হতে বিনামূল্যে সনদ সংগ্রহ করতে পারেন।
যা পূরণ করে আপনি মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে সাথে অন্যান্য তথ্য সংযোজন করে উপজেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ইউনিয়ন পরিষদের অথবা সিটি কর্পোরেশন মেয়রের অনুমতি পত্র প্রয়োজন হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা।
ব্যক্তির চূড়ান্ত নির্বাচনের পর বিবেচিত হলে প্রতি মাসিক ৮০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর ৪৮০০ টাকা প্রদান করা হবে (ব্যাংকিং/মোবাইল ব্যাংকিং) এর মাধ্যমে। এইভাবে আপনাকে দুই বছর অর্থাৎ ২৪ মাস অর্থ প্রদান করা হবে। এবং সর্বমোট ১৯,২০০ টাকা একজন গর্ভবতী মা ভোগ করতে পারবেন।
আর যদি তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে হয়, তাহলে তিন বছর অর্থাৎ ৩৬ মাসে ৬বার ৪৮০০ টাকা করে মোট ২৮,৮০০ টাকা সেবা দেওয়া হবে নির্বাচিত ব্যক্তিকে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কে তথ্য ২০২৩।
যদি আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করতে চান অবশ্যই উপরোক্ত করতে হলে সঠিকভাবে জেনে তারপর আবেদন করার চেষ্টা করবেন। কেননা এখানে আবেদন করলে কিন্তু আপনি নির্বাচিত হবেন না। গরিব ও অসহায় ব্যক্তিদের জন্য এই ভাতাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত করেছে।
আরোও পড়ুন: প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন নিয়ম ২০২৩
এখানে কোন প্রকার ভুল তথ্য সাবমিট করলে অথবা চূড়ান্ত নির্বাচনের সময় যদি কোন প্রকার সমস্যা দেখা যায় এক্ষেত্রে আপনার আবেদনটি বাতিল করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার জেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয় যোগাযোগ করবেন।
আমাদের এই আর্টিকেল থেকে এ পর্যন্ত যদি আপনার কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে অবশ্যই কমেন্টে আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং বিভিন্ন ভাতা সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত তথ্য আপডেট করা হচ্ছে দেখতে পারেন আমাদের অন্য আর্টিকেল গুলি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।