প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন নিয়ম ২০২৩| কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন।
প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন নিয়ম ২০২৩। এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানার চেষ্টা করব প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে! এবং কিভাবে আপনি প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করবেন সম্পূর্ণ ধাপ। আশা করি আপনার পরিবারের কোনো সদস্য প্রতিবন্ধী হলে বা আপনার গ্রাম/মহল্লায় কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকিলে তাকে বিষয় অবগত করতে পারবেন।
দীর্ঘ সময় নিয়ে দয়া করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল। কেননা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব প্রতিবন্ধী ভাতা সম্পর্কে সকল তথ্য। আশাকরি এখান থেকে আপনি তথ্য সম্পর্কে জানার পর পরবর্তী সময় ঘরে বসে আবেদন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা করতে পারবেন। সকল তথ্য সঠিক থাকলে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ম-কানুন আপডেট ২০২৩
প্রথমে আমরা প্রতিবন্ধী ভাতা আইন বা নিয়মকানুন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব সংক্ষিপ্তে। বাংলাদেশ সরকার দুস্ত অসহায় ও দরিদ্র ব্যাক্তিদের জন্য অনেক ধরনের ভাতা পেনশন সিস্টেম করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো প্রতিবন্ধী ভাতা।
(সমাজসেবা অধিদফতর হতে সংগ্রহীত) বর্তমান সরকার জনসাধারণের উন্নতি ও সহায়তা প্রধানের লক্ষ্যে এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে এ আইনটি বাতিল করে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ প্রবর্তন করা হয়। পূর্বে প্রতিবন্ধী সহায়তা অনুদানের হার অনেক কম থাকলেও বর্তমানে নতুন আইনের তা অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৩ লক্ষ ৬৫ হাজার জন থেকে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার জন বৃদ্ধি করে ২৯ লক্ষ জন করা হয়। মাসিক ভাতার হার ৮৫০ টাকা। যা পূর্বের আইনে ছিলো ২০০ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম খাতে মোট বরাদ্দের পরিমান ২৯৭৮.৭১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের সকল প্রতিবন্ধী এই বরাদ্দের আওতাভুক্ত এবং সকল মানসিক নিরলস প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই অনুদান গ্রহণ করতে পারবে।
তাই আপনার পরিবার পরিচিতি বা আপনার গ্রাম মহল্লার কোন ব্যক্তি যদি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে অবশ্যই তাকে এই বিষয়গুলি অবগত করিবেন। যেন তিনি সরকারি সহায়তা এবং তার প্রাপ্ত আর্থিক অনুদান গ্রহণ করতে পারে ঘরে বসেই।
প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক প্রতিবন্ধী ভাতা কারা পাবে। এবং এখানে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। যাদের মধ্যে নিম্নোক্ত লক্ষ্য পাওয়া যাবে তারা কিন্তু চাইলে প্রতিবন্ধী বা তার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং আশা করি সকল কিছু সঠিক থাকলে আপনার প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি
- আবেদনকারীকে প্রতিবন্ধী হতে হবে।
- প্রতিবন্ধী আইন ২০১৩ অনুযায়ী সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন বা পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
- যে জেলার বাসিন্দা সে জেলা হইতে এবং স্থানীয় ঠিকানা থেকে ভাতার জন্য আবেদন করতে হবে।
- আবেদনকারী ব্যাক্তির মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬,০০০ টাকার নিচে হতে হবে।
- আবেদনকারী যেকোনো ব্যাক্তির বয়স অবশ্যই ৬ (ছয়) উর্ধ্বে হতে হবে।
- বাচাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
যদি আপনার উপরোক্ত তথ্যগুলি সঠিক থাকে তাহলে আপনি প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কারা প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
শুধুমাত্র নিম্নলিখিত তথ্যগুলির উপর ভিত্তি করে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া আপনি অন্য কোন উপায় প্রতিবন্ধী আবেদন করতে পারবেন না অন্যথায় আপনার আবেদনটি বাতিল করা হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা অনুপযোগী ব্যাক্তি:
- সরকারি কোনো কর্মচারী হলে, অথবা সরকারি কোনো পেনশন বা ভাতা ভূক্ত হলে।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সরকারের অন্য কোন কর্মসূচির আওতায় সেবা গ্রহণ করিলে।
- কোনো সরকারি বা বেরকারি সংস্থা থেকে প্রতিবন্ধী আর্থিক সহায়তা পেলে।
- মাথাপিছু বার্ষিক আয় আয় ৩৬,০০০ হাজারের উর্ধ্বে হলে।
- বয়স ৬ এর নিচে হলে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
এইগুলোর সাথে যদি কোন তথ্য মিলে যায় এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করা হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করতে কাগজপত্র।
অনলাইনে যদি প্রতিবন্ধী ভাষার জন্য আবেদন করতে চান এক্ষেত্রে আপনার কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। কাগজপত্র তথ্য গুলি ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং পরবর্তী সময় প্রিন্ট করে আপনার ইউনিয়ন ভার্সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগ হতে সকল গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে এটি সমাজসেবা কার্যালয় জমা দিতে হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করতে যা যা লাগবে:
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (১৮ উর্ধ্বে হলে NID)
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র (সুবর্ণ নাগরিক কার্ড)
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার (বিকাশ/নগদ) সহ।
প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই কাগজপত্র আপনার কাছে থাকতে হবে। অনলাইনে প্রতিবন্ধী আবেদনের পর এখান থেকে আপনাকে পিডিএফ টি প্রিন্ট করে নিতে হবে। এবং পরবর্তী সময়ে এই কাগজটি আপনি আপনার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের থেকে অথবা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হতে সম্মতি স্বাক্ষর (signature) করে নিবেন।
এর পরবর্তী সময়ে আপনাকে আবার সমস্ত ডকুমেন্ট এবং কাগজপত্রসহ আপনার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। তারা পরবর্তী সময়ে সকল ধরনের আবেদন ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যদি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হয়ে থাকে এক্ষেত্রে সেটি গ্রহণ করা হবে। তারপরও তো সময় থেকে তাকে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করার নিয়ম।
অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করতে https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “প্রতিবন্ধী ভাতা” চাপ দিয়ে যাবতীয় তথ্য সাবমিট করে আবেদনটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মিয়রের স্বাক্ষর গ্রহণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। বাচাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হবে।
সর্বপ্রথম উপরে থাকা ওয়েব সাইটে প্রবেশ করবেন, এখানে আপনি মোট কয়েকটি অপশন দেখতে পারবেন কেননা এখান থেকে আপনি প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, ও বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে পারবেন। যেহত আমরা প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করবো তাই “প্রতিবন্ধী ভাতা” ক্লিক করুন।
নিচের ভিডিওটি দেখে আবেদন করুন।
ভিডিওটি অনুসরণ করে আপনি প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করতে পারবেন খুব সহজেই। এছাড়াও কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই কমেন্টে আপনার সমস্যাটা উল্লেখ করে আমাদেরকে জানাবেন।
প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা ২০২৩
অনেকেই হয়তো জানতে আগ্রহী প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা। পূর্বের আইন অর্থাৎ ২০০৫ এবং ৬ যে আইন করা হয়েছে সেই সময় ২০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হতো। তারপর পরবর্তী আইনে ৭৫০ টাকা করা হয়।
বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতা ২০২৩ প্রতিটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসে ৮৫০ টাকা করে প্রদান করা হয়। বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে এই টাকা গ্রহণ করতে পারবে প্রার্থী।
আমাদের এই আর্টিকেলটি এই পর্যন্ত পরবর্তী অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে ততক্ষণ সাথে ভালো থাকবে সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।